পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত জাহিদ ফারুক শামীম ,এমপি বলেছেন ;
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব সংকট বাড়ছে তার অন্যতম সুপেয় ও ব্যবহারযোগ্য পানি। জলবায়ুর পরিবর্তন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও সামিল। ব্যক্তি পর্যায় হতে বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি-সম্প্রীতি স্থাপনের এক অনন্য হাতিয়ার পানি। ভূ-উপরস্থ ও ভু-গর্ভস্থ পানির গুনগত মান বজায় রাখা, জলাধারের পানি প্রবাহ অটুট রাখা,পানির বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবহার ও সামাজিকভাবে পানি সংরক্ষণ এবং পানির অপচয়রোধে সচেতনতার প্রসার সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক-আঞ্চলিক-জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিতকরণে ভূমিকা রাখবে।
আজ রাজধানীর পানি ভবনের হলরুমে ‘বিশ্ব পানি দিবস:- ২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
“Water for Peace”অর্থাৎ ‘শান্তির জন্য পানি’ প্রতিপাদ্যের আলোকে দিবসের শুরুতে বর্নাঢ্য র্যালি পানি ভবন হতে সার্ক ফোয়ারা পদক্ষিণ করে। আলোচনা শেষে অনলাইন স্মরনিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানের আলোকে পানি খাতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ বাস্তবায়নের সকলকেই সচেষ্ট হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ও মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাচ্ছেন। তার হাত ধরে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন; আগামী দিনের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পানি সংবেদনশীল টেকসই উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সকলকেই অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং ধাপে নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা বজায় রাখাতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন আন্তরিক হওয়া দরকার। যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে কোনো কাজই বাধা নয়।
নদীর পানি প্রবাহ বজায় রাখা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর সংরক্ষণ,পানি দূষণ প্রতিরোধসহ সব ক্ষেত্রে কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন, জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর লক্ষ্য পূরণে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও আগামী প্রজন্মের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন; জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় সরকার গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনা, আইনের প্রয়োগ, যথাযথ বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা,জলাধারে শিল্পবর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধকরা;আইনসংগতভাবে বিভিন্ন নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা গুরুত্ব সহকারে করতে হবে। ভুমি পুনরুদ্ধার ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের দেশে ভূগর্ভস্থ পানির মূল ব্যবহার খাবার পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, সেচ কাজ এবং শিল্পক্ষেত্রে । ভূগর্ভস্থ পানির বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে এর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে, সম্পদটি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে, এবং পর্যাপ্ত পূনঃভরণ হচ্ছেনা । ফলে জনসাধারণের সুপেয় পানি প্রাপ্যতা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে । আন্তরিকতা সততা ও দেশ প্রেমে উজ্জিবিত হয় কাজ করতে হবে। সেচের পানির সরবরাহ করার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি-কৌশল খুঁজে বের করার জন্য পানি প্রকৌশলী, সেচ প্রকৌশলী, মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের আহবান জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ।
অবৈধ বালি উত্তোলনের বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা;বাঁধের উপর অবৈধ স্থাপনা স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ব্যয়বহুল স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষা করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ; জেলা/উপজেলা/ইউনিয়ন সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহকে অধিকতর কার্যকর করতে নির্দেশনা দেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে দেশের প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং,সমন্বিত নদী ও মোহনা ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় পোল্ডারের পুনর্বাসন কাজ চালু আছে। হাওড়ের ডুবন্ত বাঁধ পিআইসি’র দ্বারা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করার ফলে হাওড় এলাকায় বোরো ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। হাওর এলাকাকে আগাম বন্যামুক্ত রেখে বোরো ফসল রক্ষা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য করেন বাপাউবো এর মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা। আলোচনা করেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক, মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান। দিবসের প্রতিপদ্যের ওপর আলোচনা করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং( আইডাব্লুএম) এর নির্বাহী পরিচালক মো: জহিরুল হক খান।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানিসম্পদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং এরপর থেকে এ দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে।